বয়স বাড়ার সাথে আমাদের শরীরে যেসব রোগ বাসা বাঁধে, তারমধ্যে অন্যতম হলো আর্থ্রাইটিস বা বাত। বর্তমানে এমন বয়স্ক মানুষ খুব কমই পাওয়া যায় যাদের মধ্যে আর্থ্রাইটিস নেই। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কমপক্ষে একজনকে পাওয়া যায় যারা আর্থ্রাইটিসে ভুগছে। এটি এমন একটি রোগ যার পুরোপুরি নিরাময় হয়না। তবে হ্যাঁ, কিছু বিশেষ উপায়ে নিজের জীবনযাপনকে সাজিয়ে নিতে পারলে এর থেকে কিছুটা মুক্তি অবশ্যই পাওয়া যায়। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক সেসব উপায়।
১। সচল থাকুন, ব্যায়াম করুন
আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমানোর জন্য অন্যতম উপযোগী উপায় হলো শরীরকে সচল রাখা। বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলোকে সচল রাখুন। আপনি নিয়মিত হাঁটাচলা করুন, হালকা স্ট্রেচিং ও মাসল স্ট্রেন্থনিং ব্যায়াম করুন। এক কথায়, এমন কিছু করুন যা আপনার জয়েন্টের সাথের পেশীকে সবল করে। এতে করে আপনার শরীর থেকে এন্ডর্ফিন (Endorphin) হরমোন নির্গত হয় যা আপনার ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
২। স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেইনটেইন করুন
আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে ফাইবার সমৃদ্ধ ডায়েট অতুলনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা উচ্চ-ফাইবার সমৃদ্ধ ডায়েট করেন, তারা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা কম অনুভব করেন। কারণ এসব খাবার শরীরে প্রচুর পরিমাণে শর্ট-চেইন ফ্যাটি এসিড (Omega – 3) প্রডিউস করে, যা পেশী বা জয়েন্টের ব্যথা ও আড়ষ্ঠতা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে অলিভ অয়েল, বেরি (berry), আখরোট, ব্রকলি, পালং শাক, আঙ্গুর, আদা, রসুন, ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৩। হলুদ গ্রহণ করুন
হলুদকে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমানোর অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে মানা হয়। হলুদে রয়েছে কার্কিউমিন (Curcumin) নামের একটি উপাদান যার মধ্যে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও এন্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ও প্রদাহকে কমাতে সাহায্য করে। তাই বিভিন্ন উপায়ে (শরবত, চা, সস) হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪। সঠিক ওজন মেইনটেইন করুন
অতিরিক্ত ওজন আর্থ্রাইটিসের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে জয়েন্টে (হাঁটু, গোড়ালি, পশ্চাৎ) বেশি প্রেশার ফেলে, ফলে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা আর্থ্রাইটিস রোগীদের সবসময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন। ওজন ঠিক থাকলে শরীরের সক্ষমতা বাড়ে, ক্লান্তি কম বোধ হয়, সহজে ব্যথা অনুভব হয়না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ইত্যাদি। তাই শারীরিক গঠন অনুসারে সঠিক ওজন মেইনটেইন করার চেষ্টা করুন।
৫। জয়েন্টে ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিন
আর্থ্রাইটিসের জয়েন্টে ক্ষেত্রবিশেষে ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়ার মাধ্যমে ব্যথার মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। গরম সেঁক দিলে জয়েন্টের পেশীতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, জয়েন্টের আড়ষ্ঠতা ছুটে যায়, এবং ব্যথা তুলনামূলক কম অনুভূত হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক দিলে ভালো কাজে দেয়। এক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক পেশী ও জয়েন্টের সংশ্লিষ্ট নার্ভাস সিস্টেমকে সাময়িকভাবে স্লো করে আর্থ্রাইটিসের প্রদাহকে কমিয়ে দেয়।
৬। মাসাজ গ্রহণ করুন
বেশ কিছু ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসে মাসাজ নেওয়াকে এর একটি সল্যুশন হিসেবে দেখা হয়েছে । কারণ যেখানে আর্থ্রাইটিস হয়েছে সেখানে সঠিকভাবে মাসাজ করলে টাইট পেশীগুলো লুজ হয়, রক্ত চলাচল বাড়ে, এবং ব্যথা কমে বেশ আরাম পাওয়া যায়। বিশেষ করে যাদের রিউমাটোয়েড বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস আছে, তারা এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে মাসাজটি যেনো অবশ্যই চিকিৎসাবিদ্যা অনুসারে সঠিক (Therapeutic) হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
৭। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
আমরা সবাই জানি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপযোগী। এতে যে শুধু শরীর সতেজ আর মন ভালো থাকে তাই নয়, বরং এটি শরীরের যেকোনো ব্যথা নিয়ন্ত্রণে এবং কিছু ক্ষেত্রে নিরাময়েও সাহায্য করে। তাই ভালো ঘুমের অভ্যাস করুন।
৮। মেডিটেশন করুন
মেডিটেশনের প্রধান কাজই হলো অন্য সব চিন্তা-ভাবনা থেকে মস্তিষ্ককে ছুটি দিয়ে শুধুমাত্র যেকোনো একটা বিষয়ে পুরোপুরি কন্সেনট্রেট করা। তাই ঠিকভাবে মেডিটেশন করতে পারলে আর্থ্রাইটিসের ব্যথাকেও সাময়িকভাবে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়।
৯। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করুন
আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে বেশ ভালো একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে, তারা অন্যদের তুলনায় আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় অনেক কম ভুগেন। কারণ মানুষের সাহচর্যে থাকলে ব্যথার বোধটা সবসময় কাজ করেনা। তাই মানুষের সাথে ভালো সময় কাটান।
১০। অ্যাকুপাংচার গ্রহণ করুন
এই প্রাচীন চাইনিজ পদ্ধতি বেশ কিছু সংখ্যক আর্থ্রাইটিস রোগীর ক্ষেত্রে ভালো সাড়া দিয়েছে। অ্যাকুপাংচার করে তাদের দীর্ঘদিনের ব্যথা কমে যেয়ে আরাম পেয়েছে। তবে আমাদের দেশে সঠিকভাবে অ্যাকুপাংচার করতে পারে এমন স্থান নেই বললেই চলে। তবে ম্যানেজ করতে পারলে তা ট্রাই করে দেখতেই পারেন।