fbpx

বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের যেকোনো ব্যথাই এক দিনে তৈরি হয় না। দীর্ঘদিনের কিছু ভুল অভ্যাস ও জীবনযাপন রীতির জন্যই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই হাটুর জয়েন্টের ব্যথা দেখা দিলেই প্রথমে খোঁজার চেষ্টা করুন এই ব্যথার প্রকৃত কারণ। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যাথার বিভিন্ন কারণ থাকলেও মূলত তিনটি কারণে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা বেশি দেখা দেয়। এগুলো হলো-  

১। আঘাতজনিত কারণ

২। ক্ষয়জনিত কারণ 

৩। বাতজনিত কারণ

এছাড়াও শরীরে পুষ্টির অভাব ও বেশি শারীরিক পরিশ্রম হলেও হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ডায়েট ও লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে। তারপরও কোনো কারণে জয়েন্ট ব্যথার সম্মুখীন হলে তা কমাতে মেনে চলতে পারেন বিশেষ কিছু টিপস।

হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর সহজ টিপস ও মাধ্যম

চলুন টিপস গুলো নিয়ে আলোচনা করি –

১। হাঁটুর ব্যথা শুরু হলে প্রথমেই RICE পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন:

  • Rest (বিশ্রাম): হাঁটুতে চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  • Ice (বরফ): দিনে ২-৩ বার ১৫-২০ মিনিট করে বরফ দিয়ে সেঁক দিন।
  • Compression (চাপ): ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে হাঁটু বেঁধে রাখুন।
  • Elevation (উঁচুতে রাখা): হাঁটু হৃদপিণ্ডের চেয়ে উঁচুতে রেখে শুয়ে থাকুন।

২। হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথার স্থানে হালকা গরম পানি ঢালুন অথবা হালকা গরম কাপড়ের ভাপও নিতে পারেন। এই গরম পানি বা কাপড়ের ভাপ হাটুর পেশিকে স্থিতিশীল করবে। ফলে ব্যাথা কমতে শুরু করবে। 

৩। সরিষা তেলে রসুন, কালোজিরা দিয়ে ফুটিয়ে দিন। এবার সে তেল কুসুম গরম অবস্থায় ব্যথার স্থানে মালিশ করুন। তেল মালিশের পর বিশ্রাম নিন। বিশ্রামের সময়ে পা একটু উঁচু জায়গায় সোজা করে রাখুন। ব্যথা দ্রুত কমে আসবে।

৪। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমাতে কিছু ব্যায়ামেরও সাহায্য নিন। প্রতিদিন ১৫ মিনিট হাঁটুন। সাইকেল চালানোর মতো পায়ের ব্যায়াম করুন, হালকা স্ট্রেচিং করুন।

৫। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার একটি বড় কারণ ওজন বেশি হওয়া। কারণ শরীরের ভার যত বাড়বে, হাঁটুর ওপর তত চাপ পড়বে। তাই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। ওজন কমাতে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। 

৬। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। যা আপনার হাড় ও জয়েন্টের জন্য উপকারী।  

৭। দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনলে ব্যথা কমতে পারে:

  • আরামদায়ক ও সঠিক মাপের জুতা পরুন
  • ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলুন
  • দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে বসে থাকবেন না
  • সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন

এসবের বাইরে ঔষধ ও থেরাপি মাধ্যমেও হাটুর জয়েন্ট ব্যাথা কমানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই করবেন।

ঔষধের সাহায্যে যেভাবে ব্যাথা কমাবেন  –

১। প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করে ব্যথা কমানো যেতে পারে।

২। কর্টিকোস্টেরয়েডের মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যবহার করে ব্যথা কমানো যেতে পারে।

৩। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ব্যাথা কমাতে হাঁটুতে সরাসরি স্টেরয়েড ইনজেকশন দিতে পারেন।

৪। ডাক্তারের পরামর্শে হাটুতে ব্যথানাশক জেল বা ক্রিম লাগানো যেতে পারে।

থেরাপির মাধ্যমে যেভাবে ব্যাথা কমাবেন –

১। ফিজিওথেরাপি হাঁটুর শক্তি বাড়াতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

২। অকুপাংচার ব্যথা কমানোর একটি প্রাকৃতিক উপায়।

৩। হাইড্রোথেরাপির মাধ্যমে পানিতে ব্যায়াম করলে হাঁটুর উপর চাপ কম পড়ে এবং ব্যথা কমে।

৪। হিট থেরাপি ডিভাইস ব্যবহার করেও হাটু ব্যাথা কমানো যেতে পারে।

এটি স্পষ্ট যে কিছু সাধারণ সতর্কতা এবং যত্ন ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ, ওষুধের সঠিক ব্যবহার, এবং ফিজিওথেরাপি ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসও হাঁটুর সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। তবে ব্যথা যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, সুস্থ হাঁটু মানেই সক্রিয় জীবনধারা, তাই আমাদের প্রতিদিন হাঁটুর যত্ন নেয়া উচিত। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *